Left and Right Click

Tuesday, October 20, 2020

জ্যান্ত দূর্গা [Living Durga]

 

 জ্যান্ত দূর্গা

বেলুড় মঠের ঐতিহ্যগত দুর্গাপূজার এই প্রেক্ষাপট[১]| তবে মঠে মৃন্ময়ী মূর্তি এনে আরাধনার আগে স্বামীজী এক চিন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠার ধ্যান বা পরিকল্পনাও করেছিলেন| তিনি স্বামীজীর জ্যান্ত দূর্গা- শ্রীরামকৃষ্ণসংঘ-জননী-- মা সারদামনি|

বিবেকানন্দ- পরিকল্পিত জ্যান্ত দুর্গার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সেই ঐতিহাসিক চিঠিটির কথা এইখানে উল্লেখ করতেই হয়| ১৮৯৩ সালে আমেরিকা থেকে স্বামীজী চিঠিটি লেখেন তাঁর প্রিয় গুরুভ্রাতা স্বামী শিবানন্দজীকে| বিশ্বধর্মমহাসভায় স্বামীজীর তখন জয়জয়কার| এই জয় শ্রীরামকৃষ্ণও তথা সনাতন হিন্দুধর্মের| এই সময়েই স্বামীজী শ্রীরামকৃষ্ণ-আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করেন| শক্তিরূপিণী মা সারদামনি তাঁর এই প্রেরণার উৎস| তখনো বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা হয়নি| শ্রীরামকৃষ্ণ অন্তরঙ্গ পার্ষদরা প্রথমে বরাহনগরের একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে (যা ভুতুড়ে বাড়ি নামেই প্রসিদ্ধ ছিল) কিছুদিনের জন্য বসবাস করে পরে তা অবাবহার্য বলে কলকাতারই  আলমবাজার অঞ্চলে অন্য একটি ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠেন| এদিকে বিশ্বধর্মমহাসভায় বিজয়লাভ করে স্বামীজী ভারতবর্ষের উন্নতিকল্পে যেসব নবীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার মধ্যে একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ স্থাপনের বিষয়ও ছিল|

শক্তিরূপিণী মা সারদামনির বিষয়ে স্বামী শিবানন্দজীকে[২] লিখিত স্বামীজীর সেই ঐতিহাসিক চিঠির কিছু অংশ--- "মা ঠাকরুন কি বস্তু বুঝতে পারিনি, এখন কেহই পার না, ক্রমে পারবে| ভায়া, শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না| আমাদের দেশ সকলের অধম কেন, শক্তিহীন কেন? শক্তির অবমাননা সেখানে বলে| মা-ঠাকুরানী ভারতে পুনরায় সেই মহাশক্তি জাগাতে এসেছেন, তাঁকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী, মৈত্রেয়ী জগতে জন্মাবে| দেখেছ কি ভায়া, ক্রমে সব বুঝবে| এই জন্য তার মঠ প্রথমে চাই| ...আমেরিকা ইউরোপে কি দেখেছি? শক্তির পূজা, শক্তির পূজা| তবু এরা অজান্তে পূজা করে, কামের দ্বারা করে| আর যারা বিশুদ্ধভাবে, সাত্ত্বিকভাবে, মাতৃভাবে পূজা করবে, তাদের কি কল্যাণ না হবে! আমার চোখ খুলে যাচ্ছে| দিন দিন সব বুঝতে পারছি| সেইজন্য আগে মায়ের মঠ করতে হবে| আগে মা আর মায়ের মেয়েরা, তার পর বাবা আর বাপের ছেলেরা, এই কথা বুঝতে পারো কি?

           "এই দারুন শীতে গায়ে গায়ে লেকচার করে লড়াই করে টাকা জোগাড় করছি--- মায়ের মঠ হবে| 

           "বাবুরামের মার বুড়ো বয়সে বুদ্ধির হানি হয়েছে| জ্যান্ত দূর্গা ছেড়ে মাটির দূর্গা পূজা করতে বসেছে| দাদা, বিশ্বাস বড় ধন, দাদা, জ্যান্ত দুর্গার পূজা দেখাব, তবে আমার নাম| তুমি জমি কিনে জ্যান্ত দূর্গা মাকে যেদিন বসিয়ে দেবে, সেই দিন আমি একবার হাঁফ ছাড়ব| তার আগে আমি দেশে যাচ্ছি না| যত শীঘ্র পারবে| টাকা পাঠাতে পারলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি; তোমরা যোগাড় করে এই আমার দুর্গোৎসবটি করে দাও দেখি|..."

[১] স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা|(অধ্যায়)

[২] স্বামীজী স্বামী ব্রাহ্মানন্দজীকেও অনুরূপ এক পত্র দেন| 'অতীতের স্মৃতিতে' (স্বামী শ্রদ্ধানন্দ লিখিত) জানা যায় -- "রাজা মহারাজজির নিকট জমা চিঠিগুলির মধ্যে স্বামীজীর একখানি বহু মূল্যবান দীর্ঘ চিঠি পাওয়া গিয়েছিল| তাহাতে স্বামীজী শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে নিজের ধারণার বিষয় খুব আবেগ ভরে প্রকাশ করিয়াছিলেন| শ্রীশ্রীমায়ের মহিমা এতো সহজ ভাষায় বর্ণনা -- কালীকৃষ্ণ (স্বামী বিরজানন্দ) পড়িয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন| চিঠিখানি যে টেবিলে বসিয়া কাজ করিতেন উহার ড্রয়ারে সযত্নে তুলিয়া রাখিয়াছিলেন|" কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, উক্ত চিঠিটি কিভাবে হারিয়ে যায়|


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

No comments:

Post a Comment