Left and Right Click

Wednesday, November 11, 2020

চোদ্দ শাক খাওয়া বা চোদ্দ প্রদীপ আমরা কালীপূজার চতুর্দশীর দিন জ্বালায় কেন? [Ritual before the day of Kalipuja]


 চোদ্দ শাক খাওয়া বা চোদ্দ প্রদীপ আমরা কালীপূজার চতুর্দশীর দিন জ্বালায় কেন?


আমরা প্রায় প্রতিবছরে কালীপূজার চতুর্দশীর দিন দুপুরে চোদ্দ শাক আর রাতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালায়| কিন্তু আমরা জানি না, কেন করি? আজ জানার চেষ্টা করব যে কেন আমাদের এই রকম নিয়ম|
হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই তিথির দিনে আমাদের চোদ্দ পুরুষ পৃথিবীতে নেমে আসে| তাদের উদ্দেশে আমাদের এই নিয়ম| যেহেতু কোনো বংশের কাজ তাদের চোদ্দ পুরুষ হিসাবে হয় তাই এই নিয়ম| তাদের কাছে আমাদের প্রার্থনা থাকে যেন আমাদের জীবন থেকে খারাপ আর অন্ধকার দূর করে আমাদের আলোর পথে নিয়ে যায়| বিশ্বাস আমাদের মন এর ব্যাপার, কিন্তু এই নিয়মের পিছনে কারণ এইটাই|

Tuesday, November 10, 2020

ধনতেরাস আসলে কি? [What is Dhanteras?]


ধনতেরাস আসলে কি?

 শাস্ত্রের অপব্যাখ্যার আরেক উদাহরণ - ধনতেরস সোনার গয়না নয়, বরং আয়ুর্বেদ ঔষধ কেনার দিন।


ধন্বন্তরী একজন হিন্দু আয়ুর্বেদ দেবতা । তাঁর প্রচারেই আয়ুর্বেদ আমাদের দেশে এতো প্রসিদ্ধ। তাই আয়ুর্বেদ ও মহৌষধের কথা উঠলেই বলা হয় ধন্বন্তরীর নাম। তিনি ত্রয়োদশী তিথিতে জন্ম গ্রহণ করেন, তাই তখন থেকেই আয়ুর্বেদ প্রেমিকরা তাঁর জন্ম তিথি ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করে। হিন্দিতে এটাকে ধন্বন্তরী তেরস বা সংক্ষেপে ধনতেরস বলে। এর সাথে ধন বা অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা এতটাই মূর্খ। আর ব্যবসায়ীরা আমাদের এই মুর্খামিকেই মূলধন করে ব্যবসা করছে। 

ধন্বন্তরী জন্মেছিলেন ত্রয়োদশী তিথির শেষ লগ্নে। চতুর্দশীর শুরুতে। তাই ধন্বন্তরীর মতো আয়ুর্বেদাচার্য কে মর্যাদা দিয়ে চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ চোদ্দটি পুষ্টি গুণযুক্ত শাক খেয়ে আপনার শরীরে এই শীতের শুরুতে প্রাকৃতিক ভ্যাক্সিন প্রবেশ করানো। 

Thursday, October 29, 2020

তারা পূজা কি? [Tara Puja Ki?] (Importance of Tara Puja)


তারা পূজা কি?


কোজাগরী চতুর্দশীর দিন মানে দূর্গা পূজার দশমীর পরের চতুর্দশী বা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আগের দিনটি তারাপুজার দিন হিসাবে পালন করা হয়| এই দিন মাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রাখা হয় বিরামখানায়| সকালে মায়ের স্ন্যানের পর মাকে নিয়ে আসা হয় এই বিরামখানায়| তারপর সারাদিন ধরে চলে পুজো| মাকে সাজানো হয় রাজবেশে| এই দিন দুপুরে মাকে ভোগ দেয়া হয় না| ভক্তরা যা নিয়ে যায় মা আজ তাই খান সারাদিন ধরে| দুপুরে বিশ্রাম ও হয় না| সারাদিনের শেষে সন্ধ্যের আগে মা চলে যান মূল মন্দিরে তারপর হয় মায়ের সন্ধ্যা আরতি| এবং তারপর মায়ের শীতলী ভোগ|
তারাপুজার প্রচলন তারাপীঠে অনেকদিন আগে থেকে| কথিত আছে আজকের দিনে মহামুনি বশিষ্টদেব তারা মাকে প্রথমবার দর্শন দিয়েছিলে| সেই হিসাবে তারাপীঠে মায়ের আগমন তিথি হিসাবেও ধরা হয়| তারপর জয়দত্ত বণিক তারা মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের শিলামূর্তি আবিষ্কার করেন আজকের দিনে| উনি প্রথম যিনি মায়ের মন্দির বানিয়ে শিলামূর্তি পুজো করেন| সেই শিলামূর্তি আজও মন্দিরে পুজো হয়| এছাড়া মায়ের যে মন্দির জয়দত্ত বণিক প্রথম বানিয়েছিলেন, সেই মন্দির অনেক দিন আগেই কালের গহ্বরে হারিয়ে হয়| তবে পর আশ্চর্যজনক ভাবে সেটা উদ্ধারও হয় এবং বর্তমানে সেখানে সাধক বামদেবের সমাধি| সব দিক দিয়েই তারাপুজার গভীরতা অনেক|

জয় তারা মায়ের জয়| জয় শ্রী দূর্গা জয় তারা|

Thursday, October 22, 2020

বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা- প্রথম দুর্গাপূজা (First Durga Puja in Belur Math)

 

বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা- প্রথম দুর্গাপূজা


বেলুড় মঠের শারদীয়া দুর্গাপূজার ঐতিহ্যগত তাৎপর্য হলো ১৯০১ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারাই এই পূজা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরমারাধ্য শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীও এই পূজার সময় বেলুড় মঠে উপস্থিত ছিলেন স্বামীজীর ইচ্ছানুসারে| শ্রীশ্রীমায়ের নামেই এই পূজার 'সঙ্কল্প' করা হয় (এবং আজও সেই ধারা চলে আসছে)| আসলে সন্নাসীগণ 'সঙ্কল্প' করে কোনো পূজা বা বৈদিক ক্রিয়াকান্ড করার অধিকারী নন বলেই আদর্শ গৃহস্থ-আশ্ৰমী শ্রীশ্রীমা (যদিও ত্যাগ-তপস্যায় তিনি সন্ন্যাসীরও শিরোমণি) নামেই বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়| বিষয়টি খুব অভিনব এই কারণে যে, শ্রীশ্রীমায়ের দেহত্যাগের এতো বছর পরেও সেই একই ধারায় বেলুড় মঠের পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে| অথবা স্বামীজী যে কল্পনা করতেন শ্রীশ্রীমাকে 'জ্যান্ত দূর্গারূপে', প্রতি বছর মৃন্ময়ী মূর্তিতে কী সেই চিন্ময়ী মায়েরই অধিষ্ঠান হয়? আমরা এও জানি, স্বামীজী 'আগমনী' গান বড়ই ভালবাসতেন এবং নিজেও গাইতেন | স্বয়ং শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব ও স্বামীজীর কণ্ঠে 'আগমনী' গান শুনে সমাধিস্থ হয়েছিলেন| বেলুড় মঠেও প্রায়ই একটি 'আগমনী' গান গাইতেন তাঁর প্রিয় বিল্ববৃক্ষতলে বসে| গানটি হলো-

"গিরি গণেশ আমার শুভকারী,

পূজে গণপতি পেলেন হৈমবতী

চাঁদের মালা যেন চাঁদ সারি সারি||

বিল্ববৃক্ষমূলে পাতিয়া বোধন,

গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন,

ঘরে আনব চন্ডী, কর্ণে শুনবো চন্ডী

আসবে কত দন্ডী জটাজূটধারী|"

সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Wednesday, October 21, 2020

কি আনন্দের কথা উমে গো মা [Backstory of Maa Sarada- Briefly]

 

কি আনন্দের কথা উমে গো মা


এক সময় (সম্ভবত ১৮৯১ সালে) জয়রামবাটী গ্রামে একজন বৈরাগী (হরিদাস) এসে বেহালা বাজিয়ে গাইত দাশরথি রায়ের লেখা একটি আগমনী গান ---

"কি আনন্দের কথা উমে (গো মা)

(ওমা) লোকমুখে শুনি সত্য বল শিবানী,

অন্নপূর্ণা নাম তোর কি কাশীধামে?

অপর্ণে তোমায় যখন অর্পণ করি|

ভোলানাথ ছিলেন মুষ্টির ভিখারী|

এখন নাকি তার দ্বারে আছে দ্বারী,

দেখা পায় না তাঁর ইন্দ্র-চন্দ্র-যমে||

ক্ষ্যাপা ক্ষ্যাপা আবার বলত দিগম্বরে,

গঞ্জনা সয়েছি কত ঘরে পরে|

এখন নাকি তিনি রাজা কাশীপুরে,

বিশ্বেশ্বরী তুই বিশ্বেশ্বরের বামে||


এই গান শুনে চোখের জলে ভাসতেন মা শ্যামাসুন্দরী দেবী- ও গান যেন তাঁর মেয়ে সারদামণিরও জীবনসঙ্গীত| চোখে তাঁর দেখা দিত আনন্দাশ্রু, গানটি বারবার শুনেও যেন তৃপ্তি হতো না| আবেগ-জড়িত কণ্ঠে উপস্থিত সবাইকে বলতেন- |হ্যাঁ গো, তখন সকলেই জামাইকে ক্ষেপা বলত, সারদার অদৃষ্টিকে ধিক্কার দিত| আমায় কত কথা শোনাত, মনের দুঃখে মোর যেতুম| আর আজ দেখ, কত বড়ো ঘরের ছেলেমেয়েরা দেবীজ্ঞানে সারদার পা পূজা করছে|"


সত্যিই তো, এ মেয়ের জন্য কম গঞ্জনা সৈতে হয়েছে তাঁকে? জয়রামবাটী গ্রামের সর্বত্র জানাজানি হয়ে গিয়েছিল সে কথা- দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর মন্দিরে পূজারী হয়ে তাঁর জামাই নাকি পাগল হয়ে গিয়েছে- রাতদিন কেবলই মা! মা! করে কাঁদে| আর সেই সব কথা শুনে গাঁয়ের বৌ-ঝিরা তাই কানাকানি করত- "ওমা! শ্যামার মেয়ের ক্ষেপা জামাইয়ের সাথে বে হয়েছে|" আর তাই শুনে মেয়ের দুঃখে মায়ের বুক ভেঙে যেত| ভাবতেন, সবই অদৃষ্টের ফের! কিন্তু এই বুক ভাঙা দুঃখের মাঝেও শ্যামাসুন্দরী দেবী সময় সময় একটু সান্ত্বনা পেতেন যখন ওই গাঁয়েরই শুদ্ধস্বভাবা ভানুপিসি এসে খুব জোরের সঙ্গে তাঁকে বলতেন- :বউ ঠাকরুন, তোমার জামাই শিব, সাক্ষাৎ কৃষ্ণ- এখন যা বিশ্বাস করতে পারছ না, পরে পারবে বলে রাখছি|"


সারদামণিও জানতেন সে কথা| গিরিরাজ কন্যা উমার মতোই জানতেন তাঁর আত্মভোলা পতির স্বরূপ| জানতেন, গাঁয়ে যা রটেছে তা সত্যি নয়| তাঁর দেবতুল্য পতি পাগল হতেই পারেন না| মন তাঁর পড়ে থাকে দক্ষিণেশ্বরে- সেখানে গিয়ে পতিদেবতার সেবাযত্নের জন্য আকুল আগ্রহে দিন কাটাতে থাকেন| সে সুযোগও তাঁর এসে যায়| সেবার (চৈত্র মাস, ১২৭৮ সাল) কি এক পর্ব উপলক্ষে গ্রাম থেকে অনেক লোক কলকাতায় এসেছিলেন গঙ্গাস্নান করতে| সেই সময় সারদামণিও ভাবতেন- "সবাই এমন বলছে, আমি গিয়ে একবার দেখে আসি সেন আছেন|" বাবা তাঁর সেই মনের কথা বুঝতে পেরে তাঁকে নিয়ে হাঁটাপথে দক্ষিণেশ্বরের উদ্দেশে রওনা হলেন|


অনেক কষ্টে সারদামণি দক্ষিণেশ্বরে এসে পৌঁছলে তাঁর আপনভোলা পতি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করলেন| দেখেশুনে সারদামণি বুঝলেন, গাঁয়ে যা রটেছে তা মিথ্যা- সব মিথ্যা| তাঁর পতি পাগল কোথা- তিনি যে দক্ষিণেশ্বরে ভক্তের রাজা| তাঁকে নিয়ে সেখানে আনন্দের হাট- পতি তাঁর আশ্রিতবৎসল- যে তাঁর শরণাগত তাঁকেই আশ্রয় দিচ্ছেন- দেখাচ্ছেন ভক্তি-মুক্তির পথ|


তাই জয়রামবাটীতে সেই বৈরাগীর আগমনী গান শুনে শ্রীমা সারদামণির জীবনের সেই অধ্যায়ের কথাই তখন সকলের মনে পড়ে যেত| সেই গান শুনে অনেকেই কাঁদতেন, যেমন কাঁদতেন শ্যামাসুন্দরী দেবী, সেইসঙ্গে যোগীন-মা, গোপাল-মা-- সারদামণির দুই সহচরী| এমনকি মহাকবি গিরিশচন্দ্রও যখন কলকাতা থেকে আসতেন, এই গান শুনে  তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না| তিনি শ্রীমাকে মনে করতেন-- "মাস জগদম্বা, জগজ্জননী"| আর বিশ্ববরেণ্য সন্নাসি স্বামী বিবেকানন্দের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, মা সারদামণি তাঁর কাছে ছিলেন  সাক্ষাৎ 'জ্যান্ত দুর্গা'| 


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Tuesday, October 20, 2020

জ্যান্ত দূর্গা [Living Durga]

 

 জ্যান্ত দূর্গা

বেলুড় মঠের ঐতিহ্যগত দুর্গাপূজার এই প্রেক্ষাপট[১]| তবে মঠে মৃন্ময়ী মূর্তি এনে আরাধনার আগে স্বামীজী এক চিন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠার ধ্যান বা পরিকল্পনাও করেছিলেন| তিনি স্বামীজীর জ্যান্ত দূর্গা- শ্রীরামকৃষ্ণসংঘ-জননী-- মা সারদামনি|

বিবেকানন্দ- পরিকল্পিত জ্যান্ত দুর্গার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সেই ঐতিহাসিক চিঠিটির কথা এইখানে উল্লেখ করতেই হয়| ১৮৯৩ সালে আমেরিকা থেকে স্বামীজী চিঠিটি লেখেন তাঁর প্রিয় গুরুভ্রাতা স্বামী শিবানন্দজীকে| বিশ্বধর্মমহাসভায় স্বামীজীর তখন জয়জয়কার| এই জয় শ্রীরামকৃষ্ণও তথা সনাতন হিন্দুধর্মের| এই সময়েই স্বামীজী শ্রীরামকৃষ্ণ-আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করেন| শক্তিরূপিণী মা সারদামনি তাঁর এই প্রেরণার উৎস| তখনো বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা হয়নি| শ্রীরামকৃষ্ণ অন্তরঙ্গ পার্ষদরা প্রথমে বরাহনগরের একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে (যা ভুতুড়ে বাড়ি নামেই প্রসিদ্ধ ছিল) কিছুদিনের জন্য বসবাস করে পরে তা অবাবহার্য বলে কলকাতারই  আলমবাজার অঞ্চলে অন্য একটি ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠেন| এদিকে বিশ্বধর্মমহাসভায় বিজয়লাভ করে স্বামীজী ভারতবর্ষের উন্নতিকল্পে যেসব নবীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার মধ্যে একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ স্থাপনের বিষয়ও ছিল|

শক্তিরূপিণী মা সারদামনির বিষয়ে স্বামী শিবানন্দজীকে[২] লিখিত স্বামীজীর সেই ঐতিহাসিক চিঠির কিছু অংশ--- "মা ঠাকরুন কি বস্তু বুঝতে পারিনি, এখন কেহই পার না, ক্রমে পারবে| ভায়া, শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না| আমাদের দেশ সকলের অধম কেন, শক্তিহীন কেন? শক্তির অবমাননা সেখানে বলে| মা-ঠাকুরানী ভারতে পুনরায় সেই মহাশক্তি জাগাতে এসেছেন, তাঁকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী, মৈত্রেয়ী জগতে জন্মাবে| দেখেছ কি ভায়া, ক্রমে সব বুঝবে| এই জন্য তার মঠ প্রথমে চাই| ...আমেরিকা ইউরোপে কি দেখেছি? শক্তির পূজা, শক্তির পূজা| তবু এরা অজান্তে পূজা করে, কামের দ্বারা করে| আর যারা বিশুদ্ধভাবে, সাত্ত্বিকভাবে, মাতৃভাবে পূজা করবে, তাদের কি কল্যাণ না হবে! আমার চোখ খুলে যাচ্ছে| দিন দিন সব বুঝতে পারছি| সেইজন্য আগে মায়ের মঠ করতে হবে| আগে মা আর মায়ের মেয়েরা, তার পর বাবা আর বাপের ছেলেরা, এই কথা বুঝতে পারো কি?

           "এই দারুন শীতে গায়ে গায়ে লেকচার করে লড়াই করে টাকা জোগাড় করছি--- মায়ের মঠ হবে| 

           "বাবুরামের মার বুড়ো বয়সে বুদ্ধির হানি হয়েছে| জ্যান্ত দূর্গা ছেড়ে মাটির দূর্গা পূজা করতে বসেছে| দাদা, বিশ্বাস বড় ধন, দাদা, জ্যান্ত দুর্গার পূজা দেখাব, তবে আমার নাম| তুমি জমি কিনে জ্যান্ত দূর্গা মাকে যেদিন বসিয়ে দেবে, সেই দিন আমি একবার হাঁফ ছাড়ব| তার আগে আমি দেশে যাচ্ছি না| যত শীঘ্র পারবে| টাকা পাঠাতে পারলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি; তোমরা যোগাড় করে এই আমার দুর্গোৎসবটি করে দাও দেখি|..."

[১] স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা|(অধ্যায়)

[২] স্বামীজী স্বামী ব্রাহ্মানন্দজীকেও অনুরূপ এক পত্র দেন| 'অতীতের স্মৃতিতে' (স্বামী শ্রদ্ধানন্দ লিখিত) জানা যায় -- "রাজা মহারাজজির নিকট জমা চিঠিগুলির মধ্যে স্বামীজীর একখানি বহু মূল্যবান দীর্ঘ চিঠি পাওয়া গিয়েছিল| তাহাতে স্বামীজী শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে নিজের ধারণার বিষয় খুব আবেগ ভরে প্রকাশ করিয়াছিলেন| শ্রীশ্রীমায়ের মহিমা এতো সহজ ভাষায় বর্ণনা -- কালীকৃষ্ণ (স্বামী বিরজানন্দ) পড়িয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন| চিঠিখানি যে টেবিলে বসিয়া কাজ করিতেন উহার ড্রয়ারে সযত্নে তুলিয়া রাখিয়াছিলেন|" কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, উক্ত চিঠিটি কিভাবে হারিয়ে যায়|


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Thursday, October 15, 2020

স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা [Swamiji's Wish for Durga Puja]

 

স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা

স্থান - বেলুড় মঠ

কাল ১৯০১


স্বামীজী - ওরে, একখানা রঘুনন্দনের 'অষ্টাবিংশতি-তত্ত্ব' শিগগির আমার জন্য নিয়ে আসবি|

শিষ্য - আচ্ছা মহাশয়| কিন্তু রঘুনন্দন স্মৃতি - যাহাকে কুসংস্কারের ঝুড়ি বলিয়া বর্তমান শিক্ষিত সম্প্রদায় নির্দেশ করিয়া থাকে, তাহা লইয়া আপনি কি করিবেন?

স্বামীজী - কেন? রঘুনন্দন তদানীন্তন কালের একজন দিগগজ পন্ডিত ছিলেন, প্রাচীন স্মৃতিসকল সংগ্রহ  করে হিন্দুর দেশকালোপযোগী নিত্যনৈমিত্তিক ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করে গেছেন| সমস্ত বাংলা দেশ তো তার অনুশাসনেই আজকাল চলছে| তবে তৎকৃত হিন্দুজীবনের গর্ভধান থেকে শ্মশানান্ত আচার প্রণালীর কঠোর বন্ধনে সমাজ উৎপীড়িত হয়েছিল| শৌচে- প্রস্রাবে, খেতে- শুতে, অন্য সকল বিষয়ের তো কথাই নেই, সব্বাইকে তিনি নিয়মে বদ্ধ করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন| সময়ের পরিবর্তনে সে বন্ধন বহুকাল স্থায়ী হতে পারল না| সর্বদেশে সর্বকালে ক্রিয়াকান্ড, সমাজের আচার প্রণালী সর্বদাই পরিবর্তন হয়ে যায়| একমাত্র জ্ঞানকান্ডই পরিবর্তন হয় না| বৈদিক যুগেও দেখতে পাব ক্রিয়াকান্ড ক্রমেই পরিবর্তন হয়ে গেছে| কিন্তু উপনিষদের জ্ঞানপ্রকরণ আজ পর্যন্ত একভাবে রয়েছে| তবে তার Interpreters (ব্যাখ্যাতা) অনেক হয়েছে এইমাত্র|

শিষ্য - আপনি রঘুনন্দনের স্মৃতি লইয়া কি করিবেন?

স্বামীজী - এবার মঠে দুর্গোৎসব করবার ইছা হচ্ছে| যদি খরচার সংকুলান হয় তো মহামায়ার পূজা করব| তাই দুর্গোৎসব বিধি পড়বার ইছা হয়েছে| তুই আগামী রবিবার যখন আসবি, তখন ঐ পুস্তকখানা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবি|

শিষ্য - যে আজ্ঞা|


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Tuesday, October 6, 2020

কি ভাবে ঠিক হয় মা দুর্গা কোন বাহনে আসবেন আর কোন বাহনে যাবেন? [How Maa Durga selects her conveyance every puja?]

 

মা দুর্গা

মা দুর্গা প্রতিবছর সপরিবার আসেন এই মর্ত্যে| মহালয়ার দিন কৈলাশ থেকে যাত্রা শুরু করেন আর আবার কৈলাশে ফিরে যান বিজয়াদশমীর দিন| পুরান অনুসারে সপ্তমীর দিন মা মর্ত্যে প্রবেশ করেন| প্রতিবছর মা দুর্গা চার রকম বাহনের মধ্যে কোনো একটাতে আসেন আবার ওই চার রকমের কোনো একটাতে ফেরত যান| এই চার রকম বাহন হল: হাতি, ঘোড়া, নৌকা আর দোলা বা পালকি| খুব সহজে জেনেনি কিভাবে বুঝব মা কোন বাহনে আসবেন আর কোন বাহনে যাবেন|

মা দুর্গা এর আসা বা যাওয়া নির্ভর করে সপ্তাহের কোন বারে মা আসছেন বা যাচ্ছেন| হিসাবটি এইরকমের: রবিবার এবং সোমবার হলে হাতি, মঙ্গলবার এবং শনিবার হলে ঘোড়া, বুধবার হলে নৌকা আর বৃহস্পতি এবং শুক্রবার হলে দোলা বা পালকি| মা এর আসা হিসাব করতে হবে সপ্তমী -এর দিনটি| আর যাওয়া হিসাব করতে হবে দশমী -এর দিনটি|

Wednesday, February 26, 2020

শ্রীশ্রীগয়াধাম নাম,উৎপত্তি ও মাহাত্ম [Details About Gaya]

বিষ্ণুপদ মন্দির


শ্রীশ্রীগয়াধাম নাম,উৎপত্তি ও মাহাত্ম

গয় নামক অসুরের দেহের উপর এই মহাতীর্থ স্থাপিত; এজন্য এই পূর্ণভূমির, নাম গয়াধাম| গয়ার পিতা ত্রিপুরাসুর, মাতা শুক নামক দৈত্যর কন্যা প্রভাবতী| জগতের আদিম শ্বেতকল্পে তাঁর আবির্ভাব| কোলাহল পর্বতে দীর্ঘ সহস্র বৎসর ধরে কুম্ভক-সমাধিযোগে তাঁর কঠোর তপস্যা| সে দারুন তপস্যায় দেবতারা শঙ্কিত, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহাদেব বিচলিত| সকলকে নিয়ে গয়ার নিকট উপস্থিত হয়ে বিষ্ণু গয়কে বললেন- তোমার তপস্যায় প্রসন্ন হয়েছি, বড় প্রার্থনা কর| গয় প্রার্থনা করলেন, আমাকে দর্শন-স্পর্শন করে যাবতীয় প্রাণী যেন বৈকুন্ঠে গমনে সমর্থ হয়| বিষ্ণু বললেন- তথাস্তু|
তারপর বিষ্ণুর নির্দ্দেশে ব্রহ্মা যজ্ঞ সম্পাদনার্থে তদীয় দেহটি চাইলেন| কারণ তিনি বললেন- পৃথিবীর সমস্ত তীর্থ ভ্ৰমণ করে দেখলাম বিষ্ণুর বরে তোমার দেহই সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র| গয়াসুর সানন্দে স্বীয় দেহ দেন করলেন সমগ্র জগতের কল্যাণের জন্য| বললেন- আমি ধন্য হলাম; সকলের উপকারের জন্য আমার দেহে অবশ্য যজ্ঞ হবে| গয় দেহ প্রসারিত করে দিলেন| তাঁর মস্তকের উপর একখণ্ড শিলা স্থাপন পূর্ব্বক যজ্ঞ সম্পন্ন হল| অসুরের দেহ কম্পিত হতে থাকায় বিষ্ণু স্বীয় গদাঘাতে দেহটি নিশ্চল করে দিয়ে তদীয় মস্তকের উপর স্বীয় শ্রীপাদপদ্ম স্থাপন করে বর দিলেন- যে পর্যন্ত পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহনক্ষত্র থাকবে ততকাল এই শিলায় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর থাকবেন| পঞ্চক্রোশ গয়াক্ষেত্র, এক ক্রোশ গয়াশির| গদাধরের পূজা দ্বারা পাপনাশ হোক| যাদের সপিন্ডক শ্রাদ্ধ হবে, তারা ব্রহ্মলোকে গমন করুক| সমস্ত দেবতা ও সকল তীর্থ এখানে অবস্থান করুক| দেবগণসহ বিষ্ণু সানন্দে প্রার্থিত বর প্রদান করলে অসুরের দেহ নিশ্চল হল|

(বায়ু পুরান অষ্টম অধ্যায় থেকে সংকলিত)

তথ্যসূত্র: শ্রীশ্রীগয়া-মাহাত্ম ও  গয়া-কৃত্য (স্বামী বেদানন্দ) [ভারত সেবাশ্রম সংঘ]

Saturday, February 15, 2020

ভ্যালেনটাইন'স ডে আসলে কি? [What is Valentine's Day?]

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন

২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। পরবর্তীকালে ১৮ শতকের দিকে বিভিন্ন প্রেমের কবিতাতে  এই দিনের সম্পর্কে পাওয়া যায়| তাদের মধ্যে একটিতে দাবি করা হয় যে, তার মৃত্যুদন্ডের পূর্বে বিদায় হিসাবে তিনি জেলারের মেয়েকে একটি চিঠি লিখেছিলেন "আপনার ভ্যালেন্টাইন"| এ ছাড়াও র একটি তথ্য পাওয়া যায়, যে খ্রিস্টান সৈন্যদের বিবাহ করতে নিষেধ ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তাদের জন্য বিবাহ অনুষ্ঠান করেছিলেন।
অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন'স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক ডে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে এটি একটি অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল যেখানে দম্পতিরা ফুল উপহার দিয়ে, মিষ্টান্ন উপহার দিয়ে এবং শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়ে ("ভ্যালেন্টাইনস" নামে পরিচিত) একে অপরের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ করেছিলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস দিবস কোনও দেশে সরকারী ছুটি নয়, যদিও এটি অ্যাংলিকান সম্প্রদায় এবং লুথেরান গির্জার একটি আনুষ্ঠানিক ভোজ দিবস। পূর্ব অর্থোডক্স চার্চের অনেক অংশই রোমান প্রেসবিটার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে ৬ জুলাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস দিবস এবং ৩০ জুলাই ইন্ট্রামনার বিশপ হিওরোমারটিয়ার ভ্যালেনটাইনকে (আধুনিক তের্নি) সম্মান করে।
১৯৯২ সালের আগে ভারতে ভ্যালেন্টাইনস দিবস উদযাপন শুরু হয় নি। এমটিভি, ডেডিকেটেড রেডিও প্রোগ্রাম এবং প্রেমের চিঠি প্রতিযোগিতার মতো বাণিজ্যিক টিভি চ্যানেলগুলিতে অনুষ্ঠানের ফলে এটি একটি অর্থনৈতিক উদারকরণের পাশাপাশি বিস্ফোরণকে অনুমোদন দিয়েছিল ভ্যালেন্টাইন কার্ড শিল্প প্রসারে। মধ্যযুগের পর থেকে জনগণ কীভাবে জনসাধারণের মধ্যে তাদের স্নেহ প্রকাশ করে চলেছে এই উদযাপনের তীব্র পরিবর্তন ঘটেছে।
আধুনিক যুগে, হিন্দু ও ইসলামী সনাতনবাদীরা ছুটির দিনটিকে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক দূষন বলে বিবেচনা করেছেন, যা ভারতে বিশ্বায়নের ফলাফল। শিবসেনা এবং সংঘ পরিবার তাদের অনুসারীদের "ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরকীয়া" হওয়ার কারণে তাদের ছুটি এবং "জনসাধারণের ভালবাসার স্বীকৃতি" এড়িয়ে চলতে বলেছে। যদিও এই বিক্ষোভগুলি রাজনৈতিক উচ্চবিত্তদের দ্বারা সংগঠিত করা হয়েছে, তবে প্রতিবাদকারীরা নিজেরাই মধ্যবিত্ত হিন্দু পুরুষ যারা এই ভীত যে বিশ্বায়নের ফলে তাদের সমাজের ঐতিহ্যগুলো ধ্বংস হবে: সাজানো বিবাহ, যৌথ পরিবার, ইত্যাদি। এই বাধা সত্ত্বেও ভারতে ভ্যালেন্টাইনস ডে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।