Left and Right Click

Wednesday, February 26, 2020

শ্রীশ্রীগয়াধাম নাম,উৎপত্তি ও মাহাত্ম [Details About Gaya]

বিষ্ণুপদ মন্দির


শ্রীশ্রীগয়াধাম নাম,উৎপত্তি ও মাহাত্ম

গয় নামক অসুরের দেহের উপর এই মহাতীর্থ স্থাপিত; এজন্য এই পূর্ণভূমির, নাম গয়াধাম| গয়ার পিতা ত্রিপুরাসুর, মাতা শুক নামক দৈত্যর কন্যা প্রভাবতী| জগতের আদিম শ্বেতকল্পে তাঁর আবির্ভাব| কোলাহল পর্বতে দীর্ঘ সহস্র বৎসর ধরে কুম্ভক-সমাধিযোগে তাঁর কঠোর তপস্যা| সে দারুন তপস্যায় দেবতারা শঙ্কিত, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহাদেব বিচলিত| সকলকে নিয়ে গয়ার নিকট উপস্থিত হয়ে বিষ্ণু গয়কে বললেন- তোমার তপস্যায় প্রসন্ন হয়েছি, বড় প্রার্থনা কর| গয় প্রার্থনা করলেন, আমাকে দর্শন-স্পর্শন করে যাবতীয় প্রাণী যেন বৈকুন্ঠে গমনে সমর্থ হয়| বিষ্ণু বললেন- তথাস্তু|
তারপর বিষ্ণুর নির্দ্দেশে ব্রহ্মা যজ্ঞ সম্পাদনার্থে তদীয় দেহটি চাইলেন| কারণ তিনি বললেন- পৃথিবীর সমস্ত তীর্থ ভ্ৰমণ করে দেখলাম বিষ্ণুর বরে তোমার দেহই সর্ব্বাপেক্ষা পবিত্র| গয়াসুর সানন্দে স্বীয় দেহ দেন করলেন সমগ্র জগতের কল্যাণের জন্য| বললেন- আমি ধন্য হলাম; সকলের উপকারের জন্য আমার দেহে অবশ্য যজ্ঞ হবে| গয় দেহ প্রসারিত করে দিলেন| তাঁর মস্তকের উপর একখণ্ড শিলা স্থাপন পূর্ব্বক যজ্ঞ সম্পন্ন হল| অসুরের দেহ কম্পিত হতে থাকায় বিষ্ণু স্বীয় গদাঘাতে দেহটি নিশ্চল করে দিয়ে তদীয় মস্তকের উপর স্বীয় শ্রীপাদপদ্ম স্থাপন করে বর দিলেন- যে পর্যন্ত পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহনক্ষত্র থাকবে ততকাল এই শিলায় ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর থাকবেন| পঞ্চক্রোশ গয়াক্ষেত্র, এক ক্রোশ গয়াশির| গদাধরের পূজা দ্বারা পাপনাশ হোক| যাদের সপিন্ডক শ্রাদ্ধ হবে, তারা ব্রহ্মলোকে গমন করুক| সমস্ত দেবতা ও সকল তীর্থ এখানে অবস্থান করুক| দেবগণসহ বিষ্ণু সানন্দে প্রার্থিত বর প্রদান করলে অসুরের দেহ নিশ্চল হল|

(বায়ু পুরান অষ্টম অধ্যায় থেকে সংকলিত)

তথ্যসূত্র: শ্রীশ্রীগয়া-মাহাত্ম ও  গয়া-কৃত্য (স্বামী বেদানন্দ) [ভারত সেবাশ্রম সংঘ]

Saturday, February 15, 2020

ভ্যালেনটাইন'স ডে আসলে কি? [What is Valentine's Day?]

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন

২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। পরবর্তীকালে ১৮ শতকের দিকে বিভিন্ন প্রেমের কবিতাতে  এই দিনের সম্পর্কে পাওয়া যায়| তাদের মধ্যে একটিতে দাবি করা হয় যে, তার মৃত্যুদন্ডের পূর্বে বিদায় হিসাবে তিনি জেলারের মেয়েকে একটি চিঠি লিখেছিলেন "আপনার ভ্যালেন্টাইন"| এ ছাড়াও র একটি তথ্য পাওয়া যায়, যে খ্রিস্টান সৈন্যদের বিবাহ করতে নিষেধ ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তাদের জন্য বিবাহ অনুষ্ঠান করেছিলেন।
অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন'স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক ডে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে এটি একটি অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল যেখানে দম্পতিরা ফুল উপহার দিয়ে, মিষ্টান্ন উপহার দিয়ে এবং শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়ে ("ভ্যালেন্টাইনস" নামে পরিচিত) একে অপরের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ করেছিলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস দিবস কোনও দেশে সরকারী ছুটি নয়, যদিও এটি অ্যাংলিকান সম্প্রদায় এবং লুথেরান গির্জার একটি আনুষ্ঠানিক ভোজ দিবস। পূর্ব অর্থোডক্স চার্চের অনেক অংশই রোমান প্রেসবিটার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে ৬ জুলাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস দিবস এবং ৩০ জুলাই ইন্ট্রামনার বিশপ হিওরোমারটিয়ার ভ্যালেনটাইনকে (আধুনিক তের্নি) সম্মান করে।
১৯৯২ সালের আগে ভারতে ভ্যালেন্টাইনস দিবস উদযাপন শুরু হয় নি। এমটিভি, ডেডিকেটেড রেডিও প্রোগ্রাম এবং প্রেমের চিঠি প্রতিযোগিতার মতো বাণিজ্যিক টিভি চ্যানেলগুলিতে অনুষ্ঠানের ফলে এটি একটি অর্থনৈতিক উদারকরণের পাশাপাশি বিস্ফোরণকে অনুমোদন দিয়েছিল ভ্যালেন্টাইন কার্ড শিল্প প্রসারে। মধ্যযুগের পর থেকে জনগণ কীভাবে জনসাধারণের মধ্যে তাদের স্নেহ প্রকাশ করে চলেছে এই উদযাপনের তীব্র পরিবর্তন ঘটেছে।
আধুনিক যুগে, হিন্দু ও ইসলামী সনাতনবাদীরা ছুটির দিনটিকে পশ্চিমের সাংস্কৃতিক দূষন বলে বিবেচনা করেছেন, যা ভারতে বিশ্বায়নের ফলাফল। শিবসেনা এবং সংঘ পরিবার তাদের অনুসারীদের "ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরকীয়া" হওয়ার কারণে তাদের ছুটি এবং "জনসাধারণের ভালবাসার স্বীকৃতি" এড়িয়ে চলতে বলেছে। যদিও এই বিক্ষোভগুলি রাজনৈতিক উচ্চবিত্তদের দ্বারা সংগঠিত করা হয়েছে, তবে প্রতিবাদকারীরা নিজেরাই মধ্যবিত্ত হিন্দু পুরুষ যারা এই ভীত যে বিশ্বায়নের ফলে তাদের সমাজের ঐতিহ্যগুলো ধ্বংস হবে: সাজানো বিবাহ, যৌথ পরিবার, ইত্যাদি। এই বাধা সত্ত্বেও ভারতে ভ্যালেন্টাইনস ডে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।