Left and Right Click

Wednesday, January 13, 2021

শঙ্করাচার্য্যের প্রতিষ্ঠিত দশনামী সম্প্রদায় [Shankaracharya Founded Ten type of Saint]


শঙ্করাচার্য্য দশম শতাব্দীতে সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য ভারতের চারদিকে চারটি মঠ স্থাপন করেন| এবং ভারতের সকল সন্ন্যাসীদের দশটি সম্প্রদায়ে ভাগ করে এই চারটি মঠের অধীনে করেন| এই দশনামী সম্প্রদায় হলো- পুরী, গিরি, ভারতী, সরস্বতী, তীর্থ, আশ্রম, বন, অরণ্য, সাগর ও পর্বত| এই দশনামী সম্প্রদায় চার ভাগে বিভক্ত হয়ে চার মঠের অন্তর্গত হয়|
শঙ্করাচার্য্য প্রবর্তিত চার মঠ হলো, ভারতের উত্তরে জ্যোতিমঠ বা যোশীমঠ, দক্ষিণে শৃঙ্গেরী মঠ, পূর্বে গোবর্ধন মঠ ও পশ্চিমে সারদা মঠ|
শঙ্করাচার্য্য বেদকে চার ভাগ করে চার মঠের অন্তর্গত করেন|
তাই উত্তরে যোশী মঠের প্রধান শাস্ত্র অথর্ব বেদ| এই মঠের আরাধ্য হলো বদ্রীনারায়ণ| এই যোশী মঠের অন্তর্গত হলো, গিরি, সাগর ও পর্বত সম্প্রদায়ের সন্নাসিগণ|
দক্ষিণে ভারতের মহীশুর রাজ্যের অন্তর্গত শৃঙ্গেরী মঠের প্রধান শাস্ত্র হলো যজুর্বেদ| আরাধ্য দেবতা হলেন রামেশ্বর| এই মঠের অন্তর্গত হলো পুরী, ভারতী ও সরস্বতী সম্প্রদায়|
পূর্ব ভারতের পুরুষোত্তম তথা পুরীর গোবর্ধন মঠের প্রধান শাস্ত্র হলো ঋক বেদ| আরাধ্য দেবতা হলেন জগন্নাথ| এই মঠের অন্তর্গত সন্ন্যাসী সম্প্রদায় হলো বন ও পর্বত|
পশ্চিমে ভারতের দ্বারকায় সারদা মঠের প্রধান শাস্ত্র হলো সামদেব| আরাধ্য দেবতা হলেন দ্বারকাধীশ| এই সারদা মঠের অন্তর্গত হলো তীর্থ ও আশ্রম সম্প্রদায়ের সন্নাসিগণ|
এই দশনামী সম্প্রদায় আবার সাতটি আখড়ায় বিভক্ত| তাহলো,- নির্বানী, নিরঞ্জনী, জুনা, অটল, আনন্দ, আবাহন ও অগ্নি| নির্বানী, নিরঞ্জন ও জুনা এই তিন নাগা সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী| এর মধ্যে নিরঞ্জনী ও জুনা নাগা সন্ন্যাসীগণ হরিদ্বারে কুম্ভ যোগ স্নানের আর নির্বানী সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীগণ প্রয়াগে কুম্ভ স্নানে সর্ব প্রথম শোভাযাত্রায় থাকেন|
শঙ্করাচার্য্য প্রবর্তিত এই মঠের অধীনে ভারতের দশনামী সম্প্রদায়ের সকল সন্ন্যাসীকে নিজেদের নাম গোত্রে এই চার মঠের দীক্ষা ক্ষেত্রে অঙ্কিত হয়| এই জন্য চার মঠের অধীনে বাহান্নটি দীক্ষা কেন্দ্র আছে|
শঙ্করাচার্য্যের পাঁচ শত বছর পর ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের সময় মহাসাধক মধুসূদন সরস্বতী মূলত নাগা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন|
এই সময় মুসলমান সৈন্যরা কুম্ভমেলার হিন্দু সন্নাসিদের উপর খুবই অত্যাচার করতো| অহিংসা ও নিরস্ত্র হিন্দু সন্নাসীগণ নীরবে এই অত্যাচার সহ্য করতেন|
এইবার সম্রাট আকবরের মরণাপন্ন কন্যাকে মুধুসূধন সরস্বতী যোগবলে সুস্থ করে দেন| ভারত বিখ্যাত এই বৈদান্তিক ও মহাযোগীকে সম্রাট আকবর শ্রদ্ধার সাথে কিছু দিতে চাইলে মধুসূদন সরস্বতী তখন সম্রাট আকবরকে কুম্ভমেলায় হিন্দি সাধুদের উপর অত্যাচারের কথা বলেন|
সম্রাট তখন তাকে বলেন যে, আপনাদের আক্রমণ করলে আপনারাও সশ্রস্ত্র হয়ে পাল্টা আক্রমণ করবেন| এতে আমার সম্মতি রইলো| সেই রূপ ঘোষণাও সম্রাট আকবর করলেন|
তখন মুধুসূদন সরস্বতী চির উদাসী ও নির্ভীক নগ্ন সাধুদের সশস্ত্র করে নাগা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করলেন|

তথ্যসূত্র: মহাপীঠ তারাপীঠ (দ্বিতীয় খন্ড) -- শ্রী বিপুল কুমার গঙ্গোপাধ্যায়